রোগ বাণিজ্য : সর্বকালের জঘন্য ইতিহাস

ডাক্তার, দালাল, লুটেরা একসাথে প্রকাশ্যেই লেনদেন করে। ক্যাথল্যাবের সামনে হার্টের রিং বিক্রেতারা রিংয়ের হাট বসায়। এনজিওগ্রামে রোগীর ৬০-৭০% ব্লক পেলেই নি:শব্দে পৈচাশিক হাসি দিয়ে রোগীর লোককে ডেকে আনে। পাশে বসিয়ে যত্ন করে কম্পিউটারে সেটা দেখিয়ে জানায়, "এই মুহুর্তে রিং না লাগালে যেকোন দূর্ঘটনা হতে পারে!" রোগীর লোক কম্পিউটার বোঝেনা, শুধু বোঝে টাকা লাগবে। 

স্যারের (ডাক্তার!) কাছে জান ভিক্ষা চাইলে, তিনি দুদিনের বাকীতে রিং লাগিয়ে দেন। পেছনে লেলিয়ে দেন কোম্পানীর লোক, যারা পনের মিনিট পরপর রোগীকে টাকার জন্য ভয় দেখাতে থাকে। ওষুধ প্রশাসনের নিবন্ধনহীন নিম্নমানের রিং বিক্রি, দরকার ছাড়াই বা একটির জায়গায় দুটি রিং দেয়া, রোগীর লাখ লাখ টাকা খসিয়ে নিম্নমানের রিং দেয়া সহ এমন কোন অপকর্ম নেই যা এখানে হয় না। স্যার (!) প্রতিটি রিং বাবদ ২০-৬০ হাজার টাকা দালালী নিয়ে, ছাত্রকে (রোগী ধরা দালাল, যাদের মধ্যে ডাক্তারই বেশি!) ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দেন। এছাড়া মানবরক্ত আর দীর্ঘশ্বাস বেঁচা কোম্পানীর টাকায় বিদেশ ভ্রমণও আছে। আর এসবই ওপেন সিক্রেট!!

গুটিকয়েক অসৎ ব্যবসায়ী আর মাত্র ২০-২৫ জন ইন্টানভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট (যে হার্টে রিং পরাতে পারে) মিলে তৈরী করেছে দূর্নীতিগ্রস্থ দালাল। যারা মানুষের অজ্ঞতা, অসহায়ত্বকে পুঁজি করে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা ধান্দাবাজি করছেন। দালালীর টাকা না নেয়ায় "রিং পরানো ছাড়তে হয়েছে" এমন মাত্র দুজন ডাক্তারও আছেন। অন্য ডাক্তারদের মিনমিনে আচরণ অনেককিছুই প্রমাণ করে। অনেকেই ভুলে গেছে "অন্যায় না দেখার শাস্তিও নিজেকে বা পরিবারকে ভোগ করতে হয়।"

এই মানবতাবিরোধী অপরাধ নির্মূলে দু'একজনকে নিয়ে যিনি লড়ছেন, তিনিও ডাক্তার। তার পরিচয় পরে দেই। তবে তিনি রঙ-ঢং করে নিজের বা গাড়ী-বাড়ীর ছবি তুলে, আকাশ-বাতাস, আবেগের স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মমর্যাদা ভুলুন্ঠিত করেননি। জঙ্গলে "সব শেয়ালের এক রা" হলেও, তিনি স্ব-পেশার পক্ষে দালালী করে "চির অভাবীদের" বাহবা নেননি। বরং ষোল কোটি মানুষের নি:স্ব হওয়া থেকে বাঁচাতে যুদ্ধ করছেন। মেয়াদহীন রিং দেয়ার অর্থ রোগীকে হত্যা করা। তাই প্রমাণ পেয়ে দূদক তদন্ত কমিটি করে। তবে টাকা আর ক্ষমতার দাপটে চাপা পরে মানুষের বিশ্বাস, কষ্টার্জিত অর্থ, পরিবারের কান্না..। এখন সাধারন মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদই পারে উচ্চশিক্ষিত(!) অশুভ চক্রের মুখোশ খুলতে।


Collected from: Zahirul Haque Zahir

Post a Comment

Previous Post Next Post