গাইনী ওয়ার্ড, একজন মা মুমূর্ষু অবস্থায় লড়াই করে যাচ্ছেন; মা'কে বাঁচাতে নাইটে দায়িত্বরত ইন্টার্ন ভাইয়ারা তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করে চলেছেন। প্রলং ডেলিভারি কেস, মা কে হস্পিটালাইজড করতে যথেষ্ট সময় নেয় রোগীর পরিবার-পরিজন। পথিমধ্যে বাচ্চাটার মাথা বেরিয়ে আসে vaginal opening হতে। রোগীকে হসপিটালে এনে ভর্তি করতে করতে ভীষণ দেরী হয়ে যায়, এরই মাঝে হয়েছে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ। রোগিণীর Soft Tissue tearing ঠেকাতে প্রয়োজন পড়ে Episiotomy. আর জীবন বাঁচাতে দরকার পড়ে A (+) ব্লাড।
হন্তদন্ত হয়ে যখন রক্ত দেব বলে হোষ্টেল থেকে ছুটে যাই গাইনী ওয়ার্ডে, তখন দেখতে পাই পেশেন্টের সাথের অনেক লোকই উপস্থিত রয়েছে। রোগিণীর স্বামী, ভাসুর হতে শুরু করে উপস্থিত ছিলেন আরো দু'জন পুরুষ লোক, আর প্রায় ৩-৪ জন স্ত্রীলোক। রোজার মাস, এই অজুহাতে রক্ত দিতে ভয় পাচ্ছেন রোগিণীর স্বামী...! আমার হাতে যখন needle prick করা হলো, তখন স্বামী বেচারা অসহায় ভাবে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, "পরের বার রক্ত লাগলে আমি দিব। আপনি দেন এখন!" ...লোকটার কথা শুনে, জানি না কী হলো; তবে বুঝতে পারছিলাম, প্রচন্ড কষ্টে বুকটা ভারী হয়ে উঠেছিল।
রক্ত দিয়ে যখন ধীর পায়ে ফিরে আসছিলাম, তখন ভাইয়াদের কাছে জানতে পারি- বাচ্চাটিকে বাঁচানো যায়নি; বাচ্চাটি মায়ের জরায়ুতে থাকাকালেই মৃত্যুবরণ (IUD) করেছে। এদিকে ইউনিট রুমের বাহির দাঁড়ানো, পেশেন্টের লোকজনের উন্মাদনা, উৎকন্ঠারও কোন কমতি নেই। ভাসুর, ননদ, আর বেচারা রোগিণীর অসহায় স্বামী - সবার দাবি, বাচ্চাটিকে বাঁচানোই লাগবে; অথচ এদিক থেকে মা'টির অবস্থাও যে খুব একটা ভালো নেই- তারা কি তা বুঝতে পারছে? চিন্তা করছে?
অশান্ত এই পরিবেশ সামলে নিয়ে সবাইকে বাচ্চাটির মৃত্যুসংবাদ জানানো, সবাইকে শান্ত রাখা... আর কিছু ভাবতে পারছি না।
ইন্টার (HSC) লাইফে, জীবনের প্রথম রক্ত দিয়েছিলাম একজন প্রসূতি মা'কে। আর আজ অষ্টমবার, আজো একজন মা... আমার জানার সৌভাগ্য হয়নি, সেদিনের সেই মা'কে আল্লাহ্ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কিনা আমাদের মাঝে... তবে, সেদিনের মত আজও ভীষণ করে চাইছি, আল্লাহ্, তুমি মা'টির জীবন ভিক্ষা দাও... তুমি তাকে কেড়ে নিও না আমাদের মাঝ থেকে..।
Writer: Golam Mahade Hasan (DjMC)
Source: ডক্টরস ক্যাফে - Doctors' Cafe
Post a Comment