ঔষধের নামে বিষ! আমরা যখন গিনিপিগ!



লেখক: ডাঃ কামরান উদ্দিন

"ছয়মাস আগে প্রিয়াঙ্কা নামে দুই আড়াই বছরের ফুটফুটে একটা বাচ্চা মেয়েকে আমার কাছে নিয়ে আসে। বাচ্চার পিতা মাতার অভিযোগ, একমাস হচ্ছে ছোট্ট মেয়েটার ব্রেস্ট বড় হয়ে যাচ্ছে। আসলে সত্যি। বাচ্চাটার ব্রেস্ট বড় হয়ে যাচ্ছে।চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটাকে বলে Gynecomastia.

আমি বাচ্চাটার হিস্ট্রি নেওয়ার চেষ্টা করি। বাচ্চা কিছু খেতে চায়না। এই কারণে মাস দুয়েক আগে শহরের এক বড় চিকিৎসক দেখিয়েছেন। চিকিৎসক ঔষধ দিয়েছেন।এখন বাচ্চা খাবার খায়। কিন্তু বাচ্চার অন্য সমস্যাটি ই দেখা যাচ্ছে।আমি ডাক্তারবাবুর প্রেসক্রিপশনটা দেখি। মেডিসিনে, সিরাপ মেজেস্টল লিখা। এক চামচ করে তিনবার।বাচ্চার পেরেন্টস'কে জিজ্ঞেস করি "এই সিরাপটা কয়টা খাওয়াইছেন? পিতা বলল, তিন চারটে হবে, এখনো চলছে।আমি সিরাপটা "না খাওয়ানোর" জন্য অনুরোধ করি।কয়েকটি হরমোনাল পরীক্ষা দেয়।বাচ্চার মেয়েলি হরমোন বেড়ে গিয়েছে।

একবছর ধরে ইয়াং ছেলেদের মধ্যে বিয়ের আগে ডাক্তার দেখানোর একটা প্রচলন দেখা যায়। প্রায় ইয়াং ছেলেগুলো আসে একটাই প্রবলেম নিয়ে,"তাদের জৈবিক চাহিদা কমে গেছে"। কাম উত্তেজনা হয়না বললেই চলে। অনেকের আবার দ্রুতপতন,স্থায়িত্ব কম,( Erectile dysfunction, premature ejaculation) ইত্যাদি রোগও দেখা যায়। আমি তাদের হিস্ট্রি জানার চেষ্টা করি। এই সব স্মার্ট, সুদর্শন,ছেলে গুলো এপেটিজ সিরাপ অথবা মেজেস্টল সিরাপ চিকিৎসকের পরামর্শে অথবা বিনাপরামর্শে স্বাস্থ্যবান হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন সেবন করছে। তাই আজ তাদের এই অবস্থা।

চলুন, এই নীরব ঘাতক মেজেস্টল ও এপেটিজ সিরাপ সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে আসি...

"সিরাপ দুটোর জেনেরিক নাম মেজেস্ট্রল এসিটেট।এটা একধরনের হাইড্রক্সিপ্রজেস্টেরন হরমোন।স্টেরয়েড জাতীয়।এটা ব্রেস্ট ক্যান্সারে নির্দেশিত তবে কিছুক্ষেত্রে এইডস রিলেটেড কিংবা কেমোথেরাপি রিলেটেড ক্ষুধামন্দায় নির্দেশিত।"

কিন্তু চিকিৎসক, কোম্পানির,মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের কথায় বিশ্বাস রেখে যে কোন ধরনের ক্ষুধামন্দায়,ভিটামিন হিসেবে যেকোন বয়সী মানুষকে দিয়ে দিচ্ছে।যদিও মেডিসিনটি ৬৫ বছরের উর্ধ্বে বয়স্কদের জন্য এবং ১২ বছরে নিচে

কোন ভাবেই ব্যবহার করার যাবেনা।

কিন্তু চিকিৎসকগন এসব না ভেবে, যাচ্ছেতাই ভাবে রোগিদেরকে ভিটামিন হিসেবে যেকোন ক্ষুধামন্দায় দিয়ে দিচ্ছে।"এই সিরাপ খেলে মোটা হয়" কথাটি একজন থেকে আরেকজন শুনে শুনে, মানুষ, "মারাত্মক" এই ঔষধটি খাচ্ছে।ফলে ঔষধের সাইডইফেক্ট ও মিসইউজ এর শিকার হচ্ছে।

যেসব সাইড ইফেক্ট হয়,

যেহেতু ঔষধটি হাইড্রক্সি প্রজেস্টোরন (একধরনের মেয়েলি হরমোন)তাই এই ঔষধ ব্যবহারে ৪৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের মেন্স সার্কেল অনিয়মিত হয়ে যায়।

দীর্ঘদিন মেন্স(ঋতু) না হওয়ায় জরায়ুতে Endometriosis হতে পারে।

এলবুমিনুরিয়া, লিউকোরিয়াও হতে পারে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ছেলেদের।তাদের সেক্সুয়াল আসক্তি কমে যায়। উত্থান হয়না। দ্রুত আউট হয়ে যায়। এটা মেয়েলি হরমোন হওয়ার কারণে, অনেক ছেলেদের মেয়েলি স্বভাব চলে আসতে পারে, কন্ঠ মেয়েলি মেয়েলি হয়ে যেতে পারে, স্তন বড় হয়ে যেতে পারে,এমনকি! ইম্পোটেন্স impotence (বন্ধা) হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

তাছাড়া মাথায় টাক হতে পারে, আবার চামড়া সাদা সাদা (আংশিক শ্বেতী) হতে পারে, চর্মরোগও হতে পারে,

আর যদি ঔষধ খাওয়া ছেড়ে দেওয়া হয়,

পূর্বের ন্যায় আবারও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। যেটুকু স্বাস্থ্যবান হয়েছিল তার চেয়ে বেশি ওজন কমে যায়, শরীরের ভেতর জ্বর লেগেই থাকে, কলিজা কাপা বেশি হতে পারে(Tachycardia)।

কলিজা ধুপধাপ করে, চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে, নিশ্বাস স্লো হয়ে যেতে পারে। মনে হবে এই বুঝি প্রাণ বের হয়ে যাবে, অন্যরকম ছটফটানি হবে,(Panic disorder)..


দিনে অনেকবার এই রকম ছটফটানি হবে।


চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয়ে বার বার ব্যর্থ হবেন।


এটাই "মেজেসট্রল এসিটেট" সাইডইফেক্ট। ঠিক স্টেরয়েড খাওয়ার মতন। ছেলেদের ক্ষেত্রে তার চেয়ে অনেক বেশি।

এই ঔষধ, মেজেস্টল নামে জিসকা ফার্মার,এপেটিজ নামে এরিস্টোফার্মার,মেজেস্ট নামে বিকন ফার্মার,মেস্ট্রল নামে ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল, মেজোক্সিয়া নামে এভারেস্ট ফার্মার পাওয়া যায়।


মনে রাখবেন,এটা ক্ষুধাবৃদ্ধির ভিটামিন নয়। এই মেডিসিন এড়িয়ে চলুন।নিজে সচেতন হউন। অন্যকে সচেতন করুন।

Post a Comment

Previous Post Next Post