কোরবানির ঈদে অনেক অপেশাদার সাধারন মানুষ পশুর মাংস প্রস্তুতে নিযুক্ত হন। কাটাকাটির অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন। বিশেষ করে ভারি ধারালো অস্ত্র দিয়ে সজোড়ে হাড় কাটার সময় কারো পুরো আঙ্গুল হয়ত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
কোরবানির ঈদে এই ঘটনা বিরল নয়। প্রতি বছর ই বড় ঈদে দেশের প্লাস্টিক সার্জনদের কাছে এমন অনেক কেস আসে।কিন্তু সঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারায় এবং সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষন করে না আনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাংখিত ফলাফল দেয়া সম্ভব হয় না।
শুধু কোরবানির কাটাকাটি ছাড়া ও মারামারি বা রোড ট্রাফিক এক্সিডেন্টে ও কারো অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। বিচ্ছিন্ন অঙ্গ কেউ পুণঃসংযোজন করতে চাইলে আসতে হবে মাইক্রোসার্জারিতে পারদর্শী একজন প্লাস্টিক সার্জনের কাছে। আমরা সাধারণ মানুষ বিচ্ছিন্ন অঙ্গের সংরক্ষন পদ্ধতি জানিনা এবং কত সময়ের মধ্যে আসতে হবে তাও জানিনা।
বিচ্ছিন অঙ্গটি (আঙ্গুল,হাত বা পা) প্রথমেই নরমাল স্যালাইন দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। নরমাল স্যালাইন পাওয়া না গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে খুব দ্রুত পরিষ্কার করে নিলেও চলবে। তারপর একটি পরিষ্কার কাপড় বা টিস্যু দিয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে।
শুকনো অঙ্গটি একটি পরিষ্কার পলিথিনে ভরে পলিথিনের মুখ ভালভাবে আটকে নিতে হবে। অতপর একটি আইস বক্সে বরফ দিয়ে সেখানে পলিথিনে ভরা অঙ্গটি সংরক্ষন করতে হবে।যদি আইস বক্স না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে অন্য একটি পলিথিনে বরফ নিয়ে তার ভিতর পলিথিনে মোড়ানো অঙ্গটি সংরক্ষন করা যাবে।
বরফ দেয়ার উদ্দেশ্য হল দীর্ঘ সময় যেন সতেজ থাকে অঙ্গটি।তাই পরিবহনের সময় প্রয়োজনে মাঝপথে বরফ সংযোজন করা যাবে।
অঙ্গহানির ৬ ঘন্টার মধ্যে নির্দিষ্ট হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে।এই ক্ষেত্রে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই সবচে ভাল হয় যদি রওয়ানা দেয়ার পূর্বেই মাইক্রোসার্জারিতে অভিজ্ঞ একজন প্লাস্টিক সার্জনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে রওয়ানা দেয়া যায়,যাতে সেই সময়ের মধ্যে সার্জন তার টিম ও অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত করে ফেলতে পারে।
এই সার্জারি মাইক্রোস্কোপ এর নীচে করা হয় অথবা সার্জন একটি মাইক্রোস্কোপ সংবলিত বিশেষ চশমা পরিধান করেন যাকে লুপ বলা হয়। বিচ্ছিন্ন অঙ্গ সাধারণভাবে পূর্বের জায়গায় সেলাই করে সংযোজন করে দিলে কোনভাবেই টিকবে না। রক্তনালীর সংযোজন যা এই সার্জারির সবচে চ্যালেঞ্জিং পার্ট। এছাড়াও স্নায়ু, মাংশপেশীর টেন্ডন এই সব-ই জোড়া লাগাতে হয়।
লিখেছেনঃ ডা ইকবাল আহমেদ [স্পেশালিষ্ট প্লাস্টিক এন্ড এস্থেটিক সার্জনস, সহকারী অধ্যাপক , বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল]
Post a Comment