আউট ইনাকামের আত্মকাহিনী

 


কথোপকথনঃ ১

-জামাই কি করেন? 

-ডিসি অফিসে চাকরী করে? 

-কি পোস্টে আছেন উনি? 

-তা জানিনা, তবে টাকা পয়সা ভালই উপার্জন করে। আউট ইনকাম আসে ভালই। 

-বাহ ভালোই তো। 


কথোপকথনঃ২

- শুনলাম তোর নাকি বিয়ের কথা চলছে?  ছেলে কি করে রে?

-ছেলে অডিটর, সেকেন্ড ক্লাস জব। 

-বাহ খুবই ভালো, বিয়েশাদি করে ফেল তাহলে। ফ্যামিলি স্ট্যাটাস কেমন?

- ছেলে সরকারি চাকরী করে, এটাই তো বেশি। আর তাছাড়া ঢাকায় তার নিজের ফ্ল্যাট  আছে? 

- তাই নাকি?  তয় ছেলের বয়স কি ৫০ এর উপরে নাকি? 

- মাসুদ ফাজলামি করিস আমার সাথে? বুড়ো কে আমি বিয়ে করতে যাবো কেন?

-সেকেন্ড ক্লাস জব করে সে ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনে, আর আমি ফার্স্ট ক্লাস জব করে প্রতি মাসে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ৫০০/১০০০ টাকা ধার করি, বিষয়টা কেমন না? 

- হয়তো আউট ইনকাম আছে তার? 

-ওহ আচ্ছা, ঘুসখোর। 

একটা ফ্রী উপদেশ দেই।  তারে বিয়ে করিস না। বাচ্চা কাচ্চা মানুষ হবেনা। 

- আরে নাহ। সে কিভাবে ইনকাম করে করুক, আমার তো দেখার বিষয় না। 

-আমি আর কথা বললাম না কোন। 

বিয়ে সম্পর্কে এক বান্ধবীর সাথে আমার কথা  হচ্ছিল এভাবে। অবশ্য শেষমেষ সেখানে বিয়েটা হয়নি তার। সে নিজেই ভেঙে দিয়েছে। 


বিয়ের বাজারে আজকাল আউট ইনকামের বিষয়টা ওপেন সিক্রেট।  বেশিরভাগ সরকারি অফিসগুলোতে আউট ইনকাম বলতে ঘুষ কিংবা টাকার বিনিময়ে জণগণকে সেবা প্রদান করাকে বোঝায়। আমি অবাক হই যখন কেউ এই কাজটা করে এবং তা সগর্বে বলেও বেড়ায় মানুষকে। এটা অবশ্যই বড়সড় একটা ক্রাইম। কিন্তু না! আমাদের মহামান্য সমাজ এটাকে সাধুবাদ জানিয়ে গ্রহণ করেছে। আউট ইনকাম মানেই একটা গর্বের বিষয়। 


এদিকে সারাদিন ওষুধ কোম্পানিতে গাধার মতো খাটুনি করে ২০ হাজার টাকা বেতনের চাকরী করা ছেলেটা বিয়ে করতে গেলে মেয়ে খুজে পায় না। মেয়ের মা ছেলের পেশা শুনে বলে, ওহ্ ওষুধ কোম্পানি?(!)


পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করা বেসরকারি চাকুরীজীবি ছেলেটা বিয়ের বাজারে হেরে যায় ইন্টারমেডিয়েট পাশ করা একজন সরকারি চাকরীজীবির কাছে। 


আজকে কেন সবাই বিসিএস ব্যাংকের পেছনে দৌড়াচ্ছে?  সরকারি চাকরীর জন্য  ৫/৭ বছর অপেক্ষা করতেছে?  শুধুমাত্র সমাজ! সমাজের কারণেই আজকে এমনটা ঘটছে। এ সমাজে কোন বেকার ছেলে একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারেনা। কোন বেসরকারি চাকুরীজীবি ভালো একটা পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করতে পারে না। চরিত্রের কোন বালাই নাই বিয়ের বাজারে, ছেলে+ভালো ক্যারিয়ার হলেই, সুন্দরী মেয়ে আপনার জন্য রেডি করে রেখেছে এ সমাজ এবং সমাজের মানুষ গুলো। 


ফলস্বরূপ, দৌড়াও সরকারি চাকরীর পেছনে। সরকারি চাকরী পেতে পেতে বয়স ত্রিশ পার হয়ে যায়, বিয়ে করতে করতে বত্রিশ!১৪/১৫ বছর বয়স থেকেই একটা ছেলে যৌবনে পা রাখে। ১৪/১৫ থেকে ৩২ ! অনেক লম্বা সময়। এই দীর্ঘ সময়ে ছেলেটা কি করে?  যৌবন কাল সম্পর্কিত গুনাহগুলো সে করবে না তো কে করবে? পর্ণ সাইটে সে ঢু মারবে না তো কি করবে?


লিটনের(সরি ভাই) ফ্লাটে, পার্কে, অডিটোরিয়ামের চিপায় চাপায়, হোটেলের আনাচে কানাচে, রেস্টুরেন্টের প্রাইভেট প্লেসের ফলাফলগুলো পড়ে থাকে ডাস্টবিনে। মৃত কিংবা জীবিত। কিংবা গর্ভপাত ! 

.

আমি অবাক হয়ে যাই, যখন দেখি প্রাক্টিসিং মুসলমান পরিবারগুলোও তাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ের বিষয়টাতে ছাড় দেয় না। তাদের মেয়েকে একটা স্বল্প উপার্জনের চাকরী করা ছেলের হাতে তুলে দেয় না। তার বেকার ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দেয় না। 


সমাজ, প্লিজ এবার একটু ক্ষ্যান্ত দে যুবক যুবতীদের। এদের রিজিকের ফয়সালা উপর থেকেই হবে। তোমাকে তাদের দায়িত্ব নিতে হবেনা। একটু ইজি হও নতুন প্রজন্মের জন্য। তাহলে দেখবে কোনদিন তোমার সমাজের কোন মানুষকে গলায় দড়ি দিয়ে মরতে হবেনা। ছেলে মেয়ের কারনে বাবা মায়ের মানসম্মান চলে যাবেনা। 


জানিনা, এ সমাজের যাতাকলে আর কতদিন পিষ্ট হবে এদেশের যুব সমাজ।


© Md Masud Rana

Post a Comment

Previous Post Next Post