মেদ বেড়ে যাচ্ছে? দেখতে বিশ্রী লাগছে? আপনার পুরনো কাপড় চোপড় আর আঁটছেনা কোমরে? সঠিক খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আপনি চাইলেই এসব সমস্যা দূর করতে পারেন।
পেটের মেদ শরীরের জন্য উপকারী কিছু নয়, বরং অনেক জটিল রোগ সৃষ্টিতে তা ভূমিকা রাখে। আজকে আমরা জেনে নেব পেটের মেদ ভুঁড়ি কমাতে কি ধরনের খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং কি ধরনের ফলমূল খেতে হবে।
- তলপেটে জমা গ্যাস, রাতে দেরি করে খাওয়া, কার্বোনেটেড পানীয় পান করা, বেশি পরিমাণ ক্যালোরি যুক্ত খাবার খাওয়া, কম ঘুমোনো ইত্যাদি কারণে এসব সমস্যা দেখা দেয় । আপনি যদি মেদ কমাতে চান তাহলে সুষম খাবার গ্রহণের প্রতি বেশি মনোযোগী হতে হবে।
- কম পরিমাণে ক্যালোরি নিন যা আপনার শরীর সহজে খরচ করতে পারে। পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় বেশি করে ফল ও শাক সবজি রাখতে পারেন। পরিমিত পরিমাণে পানি পান করুন। এর মাধ্যমে শরীরের বর্জ্য দূর হয় এবং মেদ কমে যায়।
- পেটের মেদ একটি বিব্রতকর বিষয়। নারীদের তুলনায় পুরুষদের পেটের মেদ বেশি হয়। অতিরিক্ত পেটের মেদ শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে। যেমন : হৃদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ টু ডায়াবেটিস ইত্যাদি। বংশগতি, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনের ধরন ইত্যাদি পেটের মেদ বাড়াতে বড় ভূমিকা পালন করে। কিছু খাবার পেটের মেদ বাড়ায়, আবার কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো মেদ বাড়ায়।
- শীতে নিমন্ত্রণ বিভিন্ন অনুষ্ঠান, পার্টি, পিকনিক লেগেই থাকে। আর এত কিছু সামাল দিতে গিয়ে তেল-মশলার রান্না, খাওয়ার অনিয়মের জেরে শরীরে মেদ জমতে থাকে নিঃসাড়ে। এই সময়ে রুটিন মেনে শরীরচর্চা, ডায়েটেও টান পড়ে। দিনের শেষে একটা বিয়েবাড়ি বা পার্টিই শেষ করে দিতে পারে সারা দিনের নিয়ম মেনে চলা। তাই মেদ জমে যাওয়ার শঙ্কা এ সময় থাকেই।
- তবে শীতের নানা অনিয়মের পরেও মেদকে কব্জা করতে পারে এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি বা শারীরিক কসরত। সঙ্গে কিছু মরসুমি ফল।
- পুষ্টিবিদের মতে, ‘ফলের ফাইবার পেট অনেক ক্ষণ ভরা রাখে, ফলে খিদে কম পায়। ফলে খাবারের প্রতি আসক্তি কমে মেদ জমতে পারে না।’
বেশ কিছু ফল শরীরের মেদ ও ভুড়ি কমাতে সাহায্য করে। যেমন-
এক). তরমুজ
তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। এছাড়া আছে এ্যামিনো এ্যাসিড,ভিটামিন এ ও সি। এটা ওজন কমাতে খুব কার্য়করি।ওজন ঝরাতে এটা অন্যতম সেরা উপায়। প্রতিদিন তরমুজ খেতে পারলে ওজন ও মেদ সহজেই দূর হয়।
দুই). পেঁপে
পেঁপেতে ফ্যাটের পরিমাণ কম। এতে যে এনজাইম থাকে তা হজমে সাহায্য করে এবং ফ্যাট ভাঙতে পারে,যার ফলে ওজন কমে যায়। প্রতিদিন পেঁপে খেলে ১০ দিনেরে মধ্যেই এর ফল পাবেন।
তিন). আনারস
আনারস এমন এক ফল যা পেটের মেদ কমাতে খুবই উপকারী। এ ফলে ক্যালোরির মাত্রা কম থাকে। এই ফল পেটের হজম শক্তি বৃদ্ধিসহ মেদ কমাতে বেশ উপকারী ।
চার). এ্যাভোকাডো
প্রচুর ফাইবার আছে এ্যাভোকাডোতে। এটি খেলে দ্রুত খিদে পায় না। এতে থাকা মোনো-স্যাটিউরেটেড ফ্যাটি এ্যাসিড পেটে জমে থাকা মেদ কমাতে খুবই কার্যকরী।
পাঁচ). কলা
কলায় এমন কিছু এনজাইম আছে যা হজমে সহায়ক এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন কলা খাওয়ার মাধ্যমে মেদ কমাতে পারেন।
ছয়). আপেল
আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। আপেল খাওয়ার মাধ্যমে ওজন অনেকাংশ কমে যায় এবং মেদ কমাতেও সাহায্য করে।
সাত). আঙুর
শীতের আর এক উপকারী ফল আঙুর। আঙুরের রস শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে খুবই উপকরী।শরীরের ওজন কমাতে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও খুবই উপকারী। ‘জার্নাল অব ওবেসিটি’-তে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, আঙুর শরীরে ফ্যাট সেল জমতে বাধা দেয়৷ তাই শীতে প্রতি দিন কয়েক টুকরো আঙুর মেদ কমাতে বিশেষ কাজে আসে।
আট). কমলা লেবু
শীতের ফল বলতেই আমরা কমলালেবুকে বুঝি। এতে থাকা ফাইবার পেট অনেক ক্ষণ ভরা রাখে, ফলে খিদে কম পায়। এর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
নয়). বেদানা
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার উপকারিতা যেমন এই ফল থেকে পাওয়া যায়, তেমনই এই ফল লো ক্যালোরির। তাই ওজন কমাতে বিশেষ কাজে আসে বেদানা।
দশ). সবেদা
মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি ফ্যাট গলাতে বিশেষ কাজে আসে এই ফল। এর মধ্যে থাকা ফাইবার পেট ভরা রেখে খিদে নিয়ন্ত্রণ করে।
এগারো). নাসপাতি
নাসপাতির মধ্যে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড পলিমার ওজন কমাতে সাহায্য করে। নাসপাতি খোসাসুদ্ধ খেলে তা আপনার পেট অনেকক্ষণ ভরিয়ে রাখবে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমবে।
বার). স্ট্রবেরি
ব্লুবেরির মতো স্ট্রবেরিও অ্যানথোসিয়ানিনে ভরপুর। সেই কারণে স্ট্রবেরি নিয়মিত খেলে ওজন কমে। ফল মিষ্টি হওয়ায় অনেকেই মনে করেন ফল খেলে ওজন বাড়ে। কিন্তু তা নয়, স্ট্রবেরির মতো ফল ওজন কমাতে সাহায্য করে।
তের). ফুটি
এই ফলে ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন সি থাকে। এতে ওজন ঝরে। এটি খাওয়া শরীরের পক্ষেও উপকারী। এই ফল বেশ মিষ্টি। ফলে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা এর মাধ্যমেই পূরণ হয়ে যায়। আর সেই কারণে মিষ্টি খেয়ে ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও কমে।
চৌদ্দ). আম
ফলের রাজাও কিন্তু ওজন ঝরাতে সাহায্য করে। এই ফলে ভিটামিন এ, সি, ডি ও জরুরি ফাইবার থাকে। ফলে অনেক নিউট্রিশনিস্ট এই ফলকে ডায়েটের তালিকায় রাখেন। ওজন কমাতে এই ফলেরও জুড়ি মেলা ভার।
পনের). লিচু
এতে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে। এটিই ওজন ঝরাতে সাহায্য করে। খাবারের পর লিচু খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। তবে খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা পরই লিচু খান।
ষোল). তাল
এই ফলে ক্যালোরি কম থাকে। এছাড়া ফাইবার ও সরবিটলের উপস্থিতিও থাকে তালে। এই ফল রক্তচাপ কম রাখতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতেও সাহায্য করে। ডায়বেটিক রোগী যারা ওজন ঝরাতে চায়, তাদের জন্য এই ফল আদর্শ খাদ্য।
সতের). পিচ
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও ওজন কমাতে এই ফলের জুড়ি মেলা ভার। এই ফল খেলে অনাক্রম্যতা বাড়ে। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ধাতব উপাদান ও ভিটামিন থাকে। মিল্কশেকের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে পিচ।
মনে রাখবেন,
অল্প আহারে স্বাস্থ্য সহায়ক।
নিয়মিত ব্যায়াম এবং নিয়মিত হাঁটা
স্বাস্থ্য ভালো থাকে সতেজ থাকে।
অতিরিক্ত ঘুম এবং অতিরিক্ত খাবার
ওজন এবং মেদ ভুঁড়ি বেড়ে যায়।
-[ডা: মোহাম্মদ আলী, চীফ কনসালট্যান্ট, বিজিএমইএ]
إرسال تعليق