আজকে আমরা জেনে নেব শিশুদের কিভাবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে মনোযোগ বাড়ানো যায়।
অনেক অভিভাবকেরই অভিযোগ, সন্তান একদমই অমনযোগী। মনোযোগ বাড়াতে বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন অনেকেই। আসলে শিশু মাত্রেই চঞ্চল। তাদের এক জায়গায় বসানোই মুশকিল। কিন্তু পড়াশোনার ক্ষেত্রে মনোযোগ তো বাড়াতেই হবে।
(১) গল্প বলা
শোয়ার আগে কিছুটা সময় থাক গল্প বলার জন্য। অভিনয় করে গল্প বললে ওরা আগ্রহী হবে। গল্পের মাঝেই ওকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে। এতে খুদে শ্রোতাটির ধৈর্য ধরে শোনার প্রবণতাও তৈরি হয়। মনোযোগ বাড়াতে গল্প শোনানোর ভূমিকা বিরাট।
(২) খেলার ছলে
সব সময়ে পড়তে বসিয়ে বা আঁকতে বসিয়ে মনোযোগ বাড়ানো যায় না। সে ক্ষেত্রে ছোট ছোট খেলা খেলতে পারেন। ধরুন, আপনি বাজার করতে গিয়েছেন। সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে যান। ওকে বলুন বাজারে যত লাল অবজেক্ট দেখতে পাচ্ছে, সেগুলো গুনে আপনাকে বলতে। আবার কোথাও হয়তো বেড়াতে যাচ্ছেন, বাচ্চাকে বলুন দুই দিয়ে শেষ হওয়া কটি গাড়ির নাম্বারপ্লেট সে দেখতে পেল, আপনাকে গুনে জানাতে। এতেও সন্তানের মনোযোগ বাড়বে।
(৩) ইন্ডোর গেমস
এখন প্রচুর ইন্ডোর গেমস, বই পাওয়া যায়, যা বাচ্চার কগনিটিভ স্কিল বাড়ায়- যেমন নানা ধরনের অ্যাকটিভিটি বুক, বিল্ডিং ব্লকস, পাজলস ইত্যাদি। স্মার্টফোনের বদলে এই ধরনের খেলা বা বই ওর হাতে তুলে দিলে মনোযোগের সমস্যা অনেকটাই কমে।
(৪) ঘাম ঝরুক
প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা ছোটাছুটি করে খেলার জন্য বরাদ্দ করতে হবে। এতে ঘাম ঝরবে। ফলে শরীরে এনডরফিন বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হতে থাকে। এর পরেই বাচ্চাকে পড়াতে বসালে প্রথম ঘণ্টাখানেকের পড়ায় ওর পুরো মনোযোগ থাকে।
(৫) ছোট নির্দেশ
লেখার সময়ে ওকে ছোট ছোট নির্দেশ দিন। প্রথমে তিনটা দিয়ে শুরু- যেমন ছবি আঁকার ক্ষেত্রে ‘পয়েন্টগুলোকে জুড়ে দাও, রং দিয়ে আউটলাইন টানো, ভিতরটা রং করো।’ আস্তে আস্তে নির্দেশের সংখ্যা বাড়াতে থাকুন আর দেখুন ও কতটা মনে রাখতে পারছে। বাড়িতে নির্দেশ মতো ঠিকঠাক কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুললে স্কুলেও শিক্ষকদের নির্দেশ মানার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না।
(৬) অঙ্কের কেরামতি
মোটামুটি ছয় বছর থেকেই বাচ্চাকে নিয়মিত খেলাধুলার সঙ্গে প্রতিদিন কিছুটা সময় ধরে অঙ্ক কষার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। অঙ্ক মানে শুধুই সিলেবাসের বাঁধা গতের অঙ্ক নয়। পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য বইয়ের অঙ্কও কষতে হবে, অনেকটা ধাঁধার সমাধান করার ঢঙে। মনোযোগ বাড়াতে অঙ্কই হয়ে উঠতে পারে তুরুপের তাস।
(৭) মা-বাবার দায়িত্ব
বাচ্চার সঙ্গে কথা বলুন। আর ওর কথা মন দিয়ে শুনুন। মা-বাবা ধীরস্থির হয়ে, মন দিয়ে বাচ্চার কথা শুনলে স্বভাবতই ওর অতিরিক্ত ছটফটে ভাব কমে আসবে। ওর হোমওয়র্ক ওকেই করতে দিন। স্কুলে বকুনি খাওয়ার ভয়ে নিজেরা করে দেবেন না। এতে ও পড়ার গুরুত্ব বুঝতে পারবে।
বাচ্চাদের সামনে টেনশন করবেন না, আতঙ্কে ভুগবেন না। ওর সামনে অন্তত মনের ভাব চেপে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন। না হলে ওর মধ্যেও এক ধরনের অস্থিরতা জন্ম নেবে। বাড়ির পরিবেশ যদি শান্ত স্বচ্ছন্দ থাকে, বাচ্চার স্বভাবেও তার প্রভাব পড়ে।
মনে রাখবেন, "সচেতন মাতাই বাচ্চার বড় চিকিৎসক"
-[ ডা. মোহাম্মদ আলী, চীফ কনসালট্যান্ট, বিজিএমইএ]
إرسال تعليق