প্রতি ইজাকুলেশনে আনুমানিক দুই থেকে চার মিলিলিটার বা মোটামুটি আধা চা চামচ এর মত বীর্য নির্গত হয়। কতটা বীর্য নির্গত হচ্ছে তার উপরে কোন মানুষের প্রজনন ক্ষমতা বা ফার্টিলিটির বা বাচ্চা হওয়ার ক্ষমতা নির্ভর করে না । সেই বীর্যে কত সংখ্যক স্পার্ম বা শুক্র আছে বিবেচ্য বিষয় ।
বয়সন্ধিতে পৌঁছলে পুরুষের দুটি টেস্টিসের ভিতর প্রতিদিন প্রায় 12 কোটি 50 লক্ষ শুক্রবা স্পার্ম নিরবিচ্ছিন্নভাবে উৎপাদিত হতে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ শুক্রাণুর নিম্নলিখিত অংশ থাকে - ১) মাথা ২) মধ্যাঞ্চল ৩) লেজ
প্রতিটি টেস্টিস এ প্রতি সেকেন্ডে ১৫০০ টি করে শুক্রাণু উৎপাদিত হয়। আর প্রতি ইজাকুলেশনএ নিক্ষিপ্ত শুক্রাণু সংখ্যা 25 থেকে 50 কোটি।
স্পার্ম বা শুক্রাণুর লম্বা লেজের সাহায্যে প্রতি ঘন্টায় 3 মিলিমিটার হারে সামনের দিকে সাঁতার কেটে চলে। নারীর যোনিদ্বার বা ভ্যাজাইনাতে স্খলিত হওয়ার পর দশ লক্ষ শুক্র সার্ভিক্স পথে বাহিত হলেও ফ্যালোপিয়ান টিউবে মাত্র দুইশত টির মত পৌঁছায়।
সিমেন এনালাইসিস / বীর্য পরীক্ষা
আগে শুধু শুক্রাণুর সংখ্যা জানার উদ্দেশ্যে বীর্য পরীক্ষা করা হতো। বর্তমানে শুক্রাণুর চলার ক্ষমতা বা স্পার্ম মোটিলিটি ( দূরত্ব নড়াচড়া ও সাঁতার কাটার সামর্থ্য ) , অঙ্গসংস্থান বা মর্ফলজি ( গঠন) সহ আরো নানা কারণে পরীক্ষাটি করা হয় ।
বীর্য পরীক্ষা বা সিমেন এনালাইসিস এ প্রাপ্ত কিছু ফলাফল
- অলিগোস্পার্মিয়া- পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকলে তাকে অলিগোস্পার্মিয়া বলে। অলিগোস্পার্মিয়া মধ্যে কয়েকটি শ্রেণীবিভাগ আছে
- মৃদু অলিগোস্পার্মিয়া- 10 থেকে 20 মিলিয়ন শুক্রাণু/মিলি বীর্য
- মধ্যম অলিগোস্পার্মিয়া- 5 থেকে 10 মিলিয়ন শুক্রাণু/ মিলি বীর্য
- তীব্র অলিগোস্পার্মিয়া- 5 মিলিয়ন শুক্রাণুর নিচে/ মিলি বীর্য
- এজোস্পার্মিয়া- পুরুষের বীর্যের মধ্যে শুক্রাণুর অনুপস্থিতিকে এজোস্পারমিয়া বলে।
- এন্থেনোস্পার্মিয়া বা এন্থেনোজোস্পার্মিয়া - পুরুষের শুক্রাণুর স্বাভাবিক সঞ্চালন ক্ষমতা / মটিলিটি কমে যাওয়া কে এন্থেনোস্পার্মিয়া বা এন্থেনোজোস্পার্মিয়া বলে।
- নেক্রস্পার্মিয়া- পুরুষের বীর্যে শুক্রাণু সমূহ নিশ্চল (Immobile) অথবা মৃত্যু হলে তাকে নেক্রস্পার্মিয়া বলে।
- টেরাটোজুস্পার্মিয়া - পুরুষের বীর্যের মধ্যে যদি বেশিসংখ্যক অস্বাভাবিক দর্শন শুক্রানু থাকে তাকে টেরাটোজুস্পার্মিয়া বলে । যেমন অনেক সময় শুক্রানুর মাথার আকার ও আয়তন ভিন্ন হয়। এমনকি কারো কারো দুটো মাথা থাকতে পারে। তাছাড়া শুক্রানুর মাঝের অংশ ও লেজের দিকেও ত্রুটি থাকে।
সিমেন এনালাইসিস বা বীর্য পরীক্ষায় পাওয়া শুক্রাণু সংখ্যাকে স্বাভাবিক বলে ধরা হবে যদি, প্রতি মিলিমিটার সেমিনাল ফ্লুইড পিছু দুই কোটি শুক্রাণু থাকে। অন্তত 15 শতাংশ বা তারও বেশি স্বাভাবিক আকৃতির শুক্রানু থাকে ( বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসারে )। অন্তত 50 শতাংশ বা তার বেশি শুক্রাণুর স্বাভাবিক চলার ক্ষমতা বা মোটিলিটি থাকে। প্রতি ইজাকুলেশনে যেন দুই থেকে চার মিলিলিটার বীর্য পাওয়া যায়।
যারা বীর্য পরীক্ষা বা সিমেন এনালাইসিস করতে চান তাদের জানতে হবে
সাধারণত বীর্য পরীক্ষা বা সিমেন এনালাইসিস এর জন্য তিন থেকে পাঁচ দিন শরীরী মেলামেশা বা সেক্স করা বা হস্তমৈথুন করা বা স্বপ্নদোষ না হওয়া থাকলে বীর্যের নমুনা দিতে হয়। 5 দিনের বেশি না আবার তিন দিনের কম ও না। কারণ হচ্ছে, 5 দিনের বেশি হলে নমুনাটি তে মৃত্যু অথবা চলৎশক্তিহীন বা ইমোমোটাইল স্পার্ম বেশি হারে থাকতে পারে।। তিন দিনের কম হলে সম্প্রীতি যৌনমিলন ঘটে থাকলে নমুনাটি তে যত পরিমাণ স্পার্ম থাকা উচিত নাও থাকতে পারে ফলে পরীক্ষায় অনেক কম আসবে।
সাধারণত কখন বীর্য পরীক্ষা বা সিমেন এনালাইসিস করতে হয় ?
পুরুষের বন্ধ্যাত্ব নির্ণয়ের জন্য সিমেন এনালাইসিস বা বীর্য পরীক্ষা করতে হয়।এছাড়া আরো কিছু কারণে একজন ডাক্তার সিমেন এনালাইসিস বা বীর্য পরীক্ষা করিয়ে থাকেন।
শুক্রের গুণগতমান কিভাবে বাড়ানো যায় ?
জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ শুক্রানুর গুনগত মান বাড়াতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে। প্রতিদিন নাস্তা হিসেবে খেজুর, মধু, কাঁচা পিয়াজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার ( ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিন যুক্ত খাবার) , ডিম, দুধ, বাদাম, কিসমিস, মেথি শুক্রের উৎপাদন ও গুনগত মান বাড়াতে সাহায্য করে ।
সিমেন এনালাইসিস বা বীর্য পরীক্ষা করার পরে কোন অস্বাভাবিকতা বা সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
Read also:
লেখক: ডাঃ মোঃ ফাইজুল হক (১৯ বছরের অভিজ্ঞ হোমিও ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক , লেখক ও শিক্ষক)
إرسال تعليق