সমস্যা ১: যৌন আকাঙ্ক্ষার অভাব (Impaired Sexual Interest)
লক্ষণ
এখানে পুরুষদের মধ্যে যৌন উত্তেজনা আসে এবং যৌন সুখ লাভ করেন কিন্তু তাদের যৌন কাজের প্রতি আগ্রহ তীব্রভাবে কমে যায়। নিজের মধ্যে যৌন আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণে সঙ্গীর সব ধরনের যৌন আবেদন বা আচরণ তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে এবং পুরুষ নিজ উদ্যোগী হয়ে কখনো সঙ্গীর সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হয় না। কিছু কিছু পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে যৌনতায় আগ্রহ না পেলেও হস্তমৈথুন করে যৌন সুখানুভূতি লাভ করে।
অনেক নারী অভিযোগ করে থাকেন যে তাদের স্বামী তাদের সঙ্গে যৌন মিলন না করলেও তাদের সামনেই হস্তমৈথুন করে। একজন নারী এ ধরনের আচরণ কখনো মেনে নিতে পারে না এবং এতে করে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় যেটা অন্যান্য ছোট খাট বিষয় দিয়ে প্রকাশিত হয়।
স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ, ঝগড়াঝাঁটি, বিষন্নতা, সঙ্গীর প্রতি সন্দেহবাতিকতা ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সমস্যা ২: ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (Erectile Dysfunction)
লক্ষণ
DSM- 5 (Diagnostic and Statistical Manual for mental disorders) এর মতে, সঙ্গীর সঙ্গে যৌনসহবাস করার জন্য বা যোনিপথে লিঙ্গ প্রবেশ করানোর জন্য লিঙ্গ প্রয়োজনীয় পরিমান শক্ত হয় না। যৌন আদর করার পরও তাদের লিঙ্গ শক্ত হয় না, অথবা হলেও যোনিতে লিঙ্গ প্রবেশ করানোর সময় লিঙ্গটা নেতিয়ে বা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এতে করে লিঙ্গ যোনিতে ঢুকে না। অথবা ঢুকাতে পারলেও বীর্য বের (Ejaculate) হওয়ার আগেই লিঙ্গ নিস্তেজ হয়ে যায়। ফলাফল, সঙ্গীকে চূড়ান্ত যৌন সুখ দিতে পারে না। ৭ থেকে ১৮ শতাংশ পুরুষদের মধ্যে জীবনে কোনো না কোনো সময়ে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটাকেই মূলত পুরুষত্বহীনতা বলা হয়।
শৈশব নির্যাতন অথবা যৌন আঘাত, দীর্ঘ মেয়াদি চাপ, সঙ্গীকে যৌনসুখ না দিতে পারার অপরাধবোধ, বিষন্নতা, দাম্পত্য কলহ ইত্যাদি কারণে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হতে পারে।
সমস্যা ৩: দ্রুত বীর্যপাত (Premature Ejaculation)
লক্ষণ
মাস্টার অ্যান্ড জনশন, সেক্স থেরাপিস্ট (১৯৭১) এর মতে, পুরুষদের মধ্যে এটা খুবই কমন সমস্যা। এখানে যৌন আদরের কারণে পুরুষদের লিঙ্গ উত্থিত হয় কিন্তু যৌন সহবাসের নিমিত্তে নারীর যোনিপথে লিঙ্গ প্রবেশ করানোর পরপরই বীর্য বের হয়ে যায়। সময়ের হিসেবে বললে ১ মিনিটের ও কম সময়ের মধ্যে বীর্যপাত হয়ে যায়। যদিও যৌনসঙ্গমের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নাই তবুও যদি দ্রুত বীর্যপাত হয়ে যায় তাহলে সঙ্গীর মনে হতে পারে যৌনসুখের সময়টা খুবই ক্ষনস্থায়ী ছিল বা পরিপূর্ণ/চূড়ান্ত সুখ লাভ করতে পারেনি।
এরকম দ্রুত বীর্যপাত নারী এবং পুরুষ দুজনের জন্যই চরম লজ্জাকর ও হতাশাজনক হতে পারে। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পুরুষের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এ সমস্যা হতে পারে। তবে DSM-5 অনুযায়ী কারো মধ্যে এ সমস্যাটা ৬ মাস ধরে থাকলে ডাক্তার অথবা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীদের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।
যদি এ সমস্যার সঠিক কারণ এখনো অজানা তবুও মানসিক চাপ, বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা, সঙ্গীকে সুখি করতে না পারার জন্য দোষী, নিজের শরীরের ইমেজ নিয়ে আত্মবিশ্বাসের অভাব, যৌন সহবাসের সময় সম্পর্কে ভুল ধারণা ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সমস্যা ৪: বিলম্বিত বীর্যপাত (Retarded Ejaculation)
লক্ষণ
এটা পুরুষের এমন একটি সমস্যা যেখানে দীর্ঘক্ষণ যৌনসঙ্গম করার ফলেও বীর্যপাত করতে পারে না বা বীর্যপাত হয় না। এমনকি ২৫/৩০ মিনিট পরেও বীর্যপাত হয় না। এতে করে পুরুষ কখনও ক্লাইমেক্স বা চরমপুলক লাভ করে না। ওদিকে সঙ্গীর অর্গাজম হয়ে যায় (শারীরিক স্বাভাবিক অবস্থা)। কিন্তু পুরুষের বীর্যপাত না হওয়ায় বা খুবই দেরিতে হওয়ার কারণে নারী সঙ্গীর অবস্থা তখন ভয়াবহ হয়ে যায়। এ অবস্থা যদি কোনো পুরুষের মধ্যে ৬ মাসের বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা জরুরি।
এটাকে বিলম্বিত অর্গাজম বলা হয়। এ সমস্যার কারণে অনেক নারী বিবাহবিচ্ছেদ ঘটায়। কিন্তু এটার চিকিৎসা করলে সুফল পাওয়া যায়।
সমস্যা ৫: যৌন বিতৃষ্ণা বা বিরাগ (Sexual Aversion)
লক্ষণ
এখানে পুরুষের মধ্যে যৌন কাজের প্রতি মারাত্মক অনীহা চলে আসে। যৌন কাজের বা যৌন সঙ্গমের প্রতি অনীহা ঘৃণা, অপমান, লজ্জা এবং আত্মসম্মানের সঙ্গে জড়িত থাকে। এ বিতৃষ্ণা বা অনীহা যে কোনো স্পেসিফিক কাজ যেমন ওরাল সেক্স অথবা যৌনিতে লিঙ্গ ঢুকানো নিয়ে হতে পারে, এটা হতে পারে বীর্যের গন্ধ, চুমু দেয়ার সময় লালার গন্ধের প্রতি। এটা হতে পারে সঙ্গীর যৌন অঙ্গ যেমন স্তন বা যোনির প্রতি। এটা হতে পারে যৌন সঙ্গম করার সময় সঙ্গীর বিভিন্ন শব্দের প্রতি।
যৌন বিরাগ পুরো যৌন কাজের প্রতিও হতে পারে। আবার হতে পারে নির্দিষ্ট একটা কাজের প্রতি। যেমন কোনো পুরুষ হয়তোবা শুধু যৌন সঙ্গম করতে পছন্দ করে, কিন্তু যৌন আদর যেমন- চুমু দেয়া, স্তন ঘর্ষণ করা, যোনিতে চুমু দেয়া ইত্যাদি পছন্দ করে না। অনেক নারী অভিযোগ করে থাকেন তাদের সঙ্গী কোনোরকম শারীরিক অন্য আদর ছাড়া লিঙ্গ যোনিতে প্রবেশ করিয়ে দেন।
কোনো পুরুষের মধ্যে এ সমস্যা থাকলে সেটা তাদের সঙ্গীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কটা খারাপ করে দিতে পারে। তাদের ভালো যৌন সম্পর্ক হয়ে উঠে না। সম্পর্কটা তখন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়। এ অবস্থা যদি কারও মধ্যে ৬ মাস চলতে থাকে এবং এজন্য যদি তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পেলে তাহলে এটা যৌন বিপর্যয় ডিসঅর্ডার।
চিকিৎসা
আমাদের দেশে যেহেতু যৌন সমস্যা বা যৌনরোগ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয় না, তাই অনেকেই অপচিকিৎসার ফাঁদে পড়ে। লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন, ১০০% গ্যারান্টি , এক ফাইল যথেষ্ট , ২৪ ঘণ্টায় সমাধানের নিশ্চয়তা ইত্যাদির লোভে অনেকেই প্রতারিত হন।
অনেকেই পাশের ফার্মেসির বন্ধু থেকে ওষুধ নিয়ে সেবন করেন। এসব ওষুধ দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব অনেক। যার কারণে যৌন জীবন পুরোটাই শেষ হয়ে যেতে পারে।
তাই কারো মধ্যে উপরোক্ত যৌন সমস্যাগুলো দেখা দিলে সরাসরি ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।
যদি সমস্যা দীর্ঘদিনের হয় তাহলে চিকিৎসকের কাছে কাছে প্রথমে স্বামী গেলেও চিকিৎসার ধাপে ধাপে স্ত্রীকেও স্বামীর সাথে যেতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগীর ধৈর্য ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয় ।
বলা হয়ে থাকে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যতই সমস্যা থাকুক, মতের অমিল থাকুক, চাওয়া পাওয়া না মিলুক, কিন্তু দিন শেষে তাদের মধ্যে চমৎকার একটা রোমান্টিক যৌন-সম্পর্ক বাকি সব সমস্যাকে গৌণ করে দিতে পারে। যৌন সম্পর্ক শুধুই শারীরিক নয়, মানসিকও।
إرسال تعليق